Friday, January 18, 2008

কনভোকেশন ২য় পর্ব:


আমাদের ট্রেইন সিলেট স্টেশন এ পৌছানোর পর আমরা ট্রেইন থেকে নেমে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমি, ফেকু, রুমন, মেজবা, ইমন, সোহাগ, সিভিল এর মৃদুল ডাক বিভাগের গেস্ট হাউসে গিয়ে উঠলাম। আমাদের বন্ধু ফেকুর বাবার সুবাদে আমাদের গেস্ট হাউস এ উঠার সুযোগ হয়েছিলো। গেস্ট হাউস এ আমাদের অনেকটা রাজার হালে রাখা হয়েছিলো। ওইদিকে আমদের বন্ধু দিদার উঠেছিলো আমাদের সেই মদিনা মার্কেট এর পুরাতন মেস এ। তাই আমি আর রুমন ঠিক করলাম যে আমারাও অখানে একসাথে থাকব। গেস্ট হাউসে অনেক আরামে থাকার পরেও আমাদের মন পড়েছিলো আমাদের বহুল স্মৃতি বিজরিত মদিনা মার্কেট এর সেই মেস এ। অবশেষে পরেরদিন আমি আর রুমন উঠে গেলাম আমাদের পুরান মেস এ।

ওই ৫তলা তে গিয়েই আমদের মনে ধাক্কা লাগল আমদের রুম গুলো দেখে। কত স্মৃতিই না আছে সেই মেস এ। আমাদের পরিচিত সেই বিখ্যাত বারান্দা। সেই বিশাল বারান্দা থেকে সিলেট শহরের অনেকটাই দেখা যেত। ওই বারান্দা থেকে মুক্ত আকাশ দেখে আমারা মুগ্ধ হতাম। জ্যোস্না রাতে একা একা বসে সুন্দর জ্যোস্না উপভোগ করতাম। কতগুলো বিনিদ্র রজনি যে কেটেছে তার কোনো হিসাব নেই। বন্ধু দিদার যে কতগুলো রাত অই বারান্দায় বসে হাজার পৃষ্ঠার উপন্যাস লিখেছে তার হিসাব মেলা ভার। আমাদের মোবাইল আলাপনির জায়গা হিসাবে পরিচিত সেই বারান্দা। মোবাইল ফোন এর অপর পাশে থাকা রমনির কথা গুলো আজও অই বারান্দার দেয়ালে দেয়ালে প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে। হাজার হাজার মিনিট বলিদানের সৃতি আজও আমাদের নাড়া দেয়।
রুমন এর রুম এ এখন ফিজিক্স এর রাজি থাকে। রুমন আগে যে বিছানাতে বসে ধ্যান ধরতো সেই বিছানাটা না থাকলেও সেই জায়গাটা এখনো আছে। সেখানে এখন রাজি ধ্যান ধরে। মনে পড়লো রুমন কম্পিউটার এ গুরুজির বাণী ছেড়ে দিয়ে ধিরে ধিরে বালিতে রুপান্তরিত হত। ‘ধিরে ধিরে দম নিন ধিরে ধিরে দম ছারুন’-এ ছিলো রুমন এর আরাধনা। রাজি ওই রুমে গুরুজির অনেক বাণী লাগিয়েছে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’ টাইপ এর।

আমার আর দিদার এর সেই বিখ্যাত রুম আজ জুনিয়রদের দখলে। ওই রুম এ মাঝে মাঝে আমাদের অনেক বন্ধুদের গল্পের আড্ডা জমতো। দেশ-বিদেশের ও জাতির কত গুরুত্তপুর্ণ বিষয় নিয়ে যে আলোচনা হত! মাঝে মাঝে বন্ধু নাতি আসতো আমাদের মেস এ। চলতো অনেক জ্ঞ্যানগর্ভ আলোচোনা। নাতির জ্ঞ্যানের ভান্ডার দেখে আমারা মুগ্ধ হতাম। আমদের মেস এ আসতো আমদের সম্রাট বাবর। মাঝে মাঝে আসতো মেজবা, সাবু, হিমেল নাগ আরো অনেকে।

আমদের বাসার নিচে একটা চায়ের দোকান আছে। সেটা চাচার চায়ের দোকান হিসেবে বহুল পরিচিত। দেখলাম চাচার চায়ের দোকান এখনো আছে। চাচা আমদের দেখে তো অনেক খুশি। চাচা আমদের সবার নাম জানেন। নাম না জানার তো কোনো কারণ নাই, ওই চায়ের দোকান-ই তো ছিলো আমদের প্রাণ কেন্দ্র। ভার্সিটি থেকে ফিরেই আমরা বসে পরতাম চাচার চায়ের দোকানে আড্ডা জমাতে। আমাদের মাঝে এসে হাজির হতো মহামান্য শামশির। যাকে আমার বাঁশ দিয়ে অনেক মজা পেতাম। সে ও বাঁশ খেয়ে অনেক মজা পেত। আমারা তাকে বলতাম ‘এতো বাঁশ কেমনে খাস’। ওই চায়ের দোকানে আসতো আমদের জুনিওররাও। তারাও শামশির কে বাঁশ দিয়ে মজা পেত। বাবর, শিহাব, সাইফুল, রসি ভাই সবাই চলে আসতো দূর দূরান্ত থেকে। অই চায়ের দোকানেও বেচাকেনা হত অনেকের ভাল লাগা রমনিদের। বেচাকেনাটা একটূ ভিন্ন। যে বেশি খাওয়াতে পারতো চায়ের দোকানে সেই পেয়ে যেত কাঙ্খিত রমনিকে। এ পাওয়া মনে মনে, অনেকটা মন কলা খাওয়ার মত অবস্থা। ওখানে সিনিওরদের বিচারক করে বসতো আদালত। সে এক ভিন্ন আদালত, আদালতে বিচারও হত ভিন্ন কায়দায়। বিভিন্ন কারণে অনেক অনেক টাকা জরিমানা করে শেষে শতকরা হিসাব করে একটা এমাউন্ট ঠিক করে দেয়া হত, তথাকথিত আসামি সেই এমাউন্ট এর টাকা দিয়ে আমাদের খাইয়ে দিত। বিচার এর বিষয় ও ছিল বড়ই অদ্ভুত, কে কি ফাউল কথা বলেছে, কে কাকে নিয়ে গল্প করেছে, কতবার এক রমনির নাম উচ্চারণ করেছে ইত্যাদি। অনেক অনেক ইতিহাস রচিত হয়েছে সেই চায়ের টং এ বসে। শীতের রাতে কত জুনিয়র এর শার্ট খুলে নিয়েছি কথিত বেয়াদবির কারণে। বসতাম সন্ধ্যার সময় আর উঠতে উঠতে হয়ে যেত রাত ১২টা-১টা।

Thursday, January 17, 2008

কনভোকেশন --প্রথম পর্বঃ



­­­­­­­­যেদিন প্রথম মেইল এ একটা লিঙ্ক থেকে নিউজ পাইলাম যে আমাদের ইউনিভারসিটিতে কনভোকেশন হতে যাচ্ছে তখন থেকেই এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। আমি, রুমন, সজিব, মোস্তা আর সব বন্ধুরা মিলে প্লান করতে থাকলাম কিভাবে কনভোকেশন এ এটেন্ড করতে সিলেট যাওযা যায়। আমরা সবাই ডিসিশন নিলাম যে ট্রেইন এ যাব সিলেট। যেমন কথা তেমন কাজ। আমারা কয়েকজন মিলে বসুন্ধরা সিটিতে একত্রিত হলাম। দায়িত্ত পড়লো কয়েক জন এর উপর টাকা তোলার। টাকা তোলা হল। এরপর টিকেট কেনার দায়িত্ত পরলো রুমন আর সজিব এর উপর। রুমন খোজ নেয়ার পর আমি, রুমন, সজিব, রেমন গেলাম টিকেট কিনতে। টিকেট দেয়ার কথা ১০ দিন আগে কিন্তু টিকেট কাউন্টার এর লোক জন বলে এখও ১০ দিন হয়নি। ৪ তারিখ এর টিকেট পাওয়া যাবে আজ নয় পরের দিন। আমাদের তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো এই কথা শুনে। এতো রাতে শীতের মধ্যে আসলাম আর বেটা বলে কি। আমাদের বন্ধু সাজিবের বাবার রেইলওয়েতে পরিচিত লোক ছিলো তাই সজিবের উপর দায়িত্ত দিয়ে আমরা বাসায় ফিরে আসলাম। পরেরদিন কাবিল সজিব ঠিকই ৩৫ টা বা তারো বেশি টিকেট কিনে ফেল্লো। এর পরে বারতি টাকা দিয়ে খাবার কেনার কাজটা রুমন, সাজিব এবং মোস্তা মিলে সেরে ফেল্লো। সবাইকে গ্রুপ এ মেইল করে জানিয়ে দেয়া হল যে টিকেট কেনা হয়ে গেছে। সবাই মহা আনন্দে অপেক্ষা করতে লাগলো কনভোকেশন এ যাওয়ার জন্য। ৪ তারিখ রাত ১০ টায় আমাদের ট্রেইন সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
আমাদের সেই বহু প্রতিক্ষিত ৪ঠা ডিসেম্বর। আমারা সবাই এক এ এক এ স্টেশনে হাজির হতে থাকলাম। স্টেশনে এসে দেখি শুধু SUST –এর Student. আমাদের সবার সাথে দেখা হতে লাগলো। সবাই ট্রেইন এ উঠলাম, ট্রেইন ছারলো, আমাদের যাত্রা শুরু হল।
ট্রেইন ছারার আগেই সুরু হয়ে গিয়েছিলো আমাদের পুংটামি। বিষেষ করে আমাদের তানিম এর মজাদার কথা বার্তা। আমারা সবাই জানি তানিম কি জিনিস। তানিম একটা করে কথা বলে আর সবাই হাসতে হাসতে অস্থির। এর মধ্যে এসে যোগ দিয়েছিলো BBA এর রনি। পুরাটা বগি জুরে ছিলাম আমরা 2k Batch এর বন্ধুরা আর আমাদের সাথে ছিলো কিছু বড় ভাই। আমাদের মহামান্য শামশির ভাই, মহামান্য দিদার ভাই, সনত দা, রসি ভাই, রুপম ভাই, আরজু ভাই, সাইফ ভাই। সেখানে শামশির যথারিতি বাঁশ খেলো। রসি তার পুংটামি দেখালো। আমাদের সবার মজা করাটা আমাদের আশে পাশের বগির লোক জনের আর সয্য হইলো না। ট্রেইন এর টিটি এসে আমাদের বারবার হুমকি দিতে লাগলো এই বলে যে আমরা আমাদের চিল্লা চিল্লি না থামালে পাশের বগির লোকজন ট্রেইন থামাইয়া দিবে। তাদের ঘুমের খুবই সমসস্যা হচ্ছে। আমরা আমাদের চিল্লাচিল্লি থামাই আবার কিছুক্ষন পর শুরু করি। এভাবেই চলতে থাকলো সারাটা রাস্তা। আশে পাশের আরও কয়েকটা বগি SUST এর Student দিয়ে ভরতি ছিলো। সবাই এসে আমাদের সাথে দেখা করছিলো আমরাও ওদের বগি VISIT করতে যাচ্ছিলাম। অনেক আনন্দ ফুরতির ভিতর দিয়ে আমাদের ট্রেইন সিলেট স্টেশন এ এসে পৌছালো।


চলবে ...